সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ , ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আ.লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নেই, নির্বাচনের তারিখ পেছাবে না : প্রধান উপদেষ্টা 'তাহিরপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতি' সুনামগঞ্জের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত থামছে না চোরাচালান নদীর পাড় কাটা বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান, জরিমানা আদায় সাচনা ইউনিয়ন যুবদলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অটোরিকসা উল্টে আহত ১০ ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা খুন ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান নাশকতার মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার নির্বাচিত সংসদ ছাড়া সংস্কার বৈধ হবে না : আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ আমরা চাই না : নাহিদ ইসলাম দিরাইয়ে বিএনপি’র ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত তল্লাশি করতে ট্রাকে ওঠা পুলিশ সদস্যকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা, দুই ডাকাত গ্রেফতার দিরাইয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার কোনো তন্ত্র-মন্ত্র নয়, ইসলামী শাসন কায়েম হবে বাংলাদেশের ভূখন্ডে : ডা. আব্দুল কুদ্দুস শত্রুতার জেরে বিষ দিয়ে চার শতাধিক হাঁস হত্যা! হাওরে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ভূমিকম্পের শঙ্কায় কাগুজে প্রস্তুতি বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ ৭ দফা দাবি নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চায় পরিবার

হাওরে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

  • আপলোড সময় : ১৯-০৩-২০২৫ ০৮:৪৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০৩-২০২৫ ০৮:৫৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
হাওরে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ছবি: সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে তোলা ছবি
শামস শামীম, টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ফিরে ::

আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্ষা মওসুমে প্রায় লাখ পর্যটক আসেন
মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই জলাভূমিটি এখন দেশের পর্যটকদের প্রিয় পছন্দের স্থান পেয়েছে
বর্ষার বিস্তৃত হাওরের নীলজল, সারি সারি হিজল-করচ বনের ভিতর জলকেলি করে আনন্দ করেন তারা। কিন্তু এই আনন্দ করতে যেয়ে হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশেরও ক্ষতি করছেন।
প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের বর্জ্য হাওরে ফেলে দিচ্ছেন তারা। এখন শুকিয়ে যাওয়া হাওরের যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ প্লাস্টিক সামগ্রীর স্তূপ ভেসে ওঠছে। এছাড়া স্থানীয় কৃষকদের তৈরি প্লাস্টিকের চাইয়ের (মাছ ধরার যন্ত্র) স্তূপও লক্ষ করা গেছে জলমহালের কান্দায়।
সরেজমিনে সম্প্রতি হাওরটির জয়পুর, গোলাবাড়ি, বাগমারা কান্দায় গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। যেখানে পর্যটকরা ঘুরেন বেশি সেই এলাকাতেই চারদিকেই এই চিত্র লক্ষণীয়। গোলাবাড়ি ওয়াচ টাওয়ার থেকে বাগমারা জলাশয়ের পশ্চিমের কান্দা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার হেটে অন্তত ৫০টি স্পটে প্লাস্টিকের স্তূপ দেখা গেছে। এছাড়া সর্বত্রই বোতল, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিনের টুকরো দেখা গেছে। পর্যটকরা প্রতিবছর এই হাওরটিতে কি পরিমাণ প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলেন তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এমনকি পর্যটকদেরও কোনও পরিসংখ্যান নেই।
হাওরটিতে প্রতিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন জানিয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন গাইড লাইন তৈরি করতে সিএনআরএসসহ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলকে দায়িত্ব দিয়েছে। গবেষক দলটি ইতোমধ্যে একাধিকবার হাওর ভ্রমণ করেছে। তবে এটি এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, গত দেড় দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটন বৃদ্ধি পেয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে একসময় পর্যটকরা কম আসলেও গত দেড় দশকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপকতার কারণে হাওরটি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তারা দলে দলে হাওরে ভ্রমণ করতে আসছেন। তবে গত প্রায় ৫ বছরে বিশালাকার নান্দনিক হাউস বোট নির্মিত হওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা আরো বাড়ছে। হাউস বোটে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার কারণে পারিবারিক ও দলবদ্ধভাবেও অনেকে ঘুরতে আসছেন। যারা হাওরে ঘুরাঘুরি করতে আসেন তারাই মূলত প্লাস্টিকের বর্জ্য হাওরটিতে নিক্ষেপ করেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্থানীয়রা আরো জানান, গোলাবাড়ি ওয়াচ টাওয়ার এলাকাতেই বেশি নোঙ্গর গাড়েন পর্যটকরা। পাশাপাশি হাওর হয়ে টেকেরঘাট খনি প্রকল্পের সামনে গিয়েও নোঙ্গর গাড়েন। সেখানেই তারা রাত্রিযাপন করেন। সারাদিন হাওরের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন কান্দায় ঘুরাঘুরি করেন। আনন্দ করার সময় অনেকে খেয়ালে-বেখেয়ালে প্লাস্টিকের বর্জ্য নিক্ষেপ করেন। জানা গেছে, প্রশাসন প্রতিটি হাউস বোটে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা রাখলেও বেশিরভাগ পর্যটকরাই সেটা মানছেন না। ফলে দিন দিন হাওরটিতে বর্জ্য নিক্ষেপের ঘটনাও বাড়ছেই। এতে হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। যা এখন হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হয়ে ওঠছে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আহমদ কবীর বলেন, আমি প্রতিদিনই হাওরের বিভিন্ন কান্দা ঘুরাঘুরি করি। প্রতিদিনই বিভিন্ন জলাশয়ে, কান্দায় প্লাস্টিকের বর্জ্যরে স্তূপ দেখি। অপচনশীল এই দ্রব্য হাওরটির অনেক ক্ষতি করছে। এটা বাড়তে থাকলে এক সময় হাওরটির সর্বত্রই প্লাস্টিকের এমন স্তর দেখা দিবে। পর্যটকদের সাবধান হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনকেও এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
হাওরের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য গবেষক কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, প্লাস্টিক অনেক দিন টিকে থাকার কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মাইক্রো প্লাস্টিক পানিতে ছড়িয়ে পড়ার কারণে উদ্ভিদের মাধ্যমে মানুষের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। যে কারণে ভয়ঙ্কর সব অসুখ বিসুখ হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওর যেহেতু জলাভূমি এখানে মাইক্রো প্লাস্টিক উদ্ভিদ বৈচিত্র্যেরও ক্ষতি করবে। স্থানীয় মানুষদেরও ক্ষতি করবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, বছরে প্রায় ৪ লাখ পর্যটক আসেন হাওরটিতে। আমরা পর্যটকদের প্লাস্টিকের বর্জ্য ডাস্টবিনে ফেলার ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি হাউস বোটে এই ব্যবস্থা আছে। কিন্তু অনেকেই এটা ব্যবহার করেনা। আমাদের সবাইকে সচেতন না হলে টাঙ্গুয়ার জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সুরক্ষা সম্ভব নয়। তবে পর্যটক গাইড লাইন বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কোনও নির্দেশিকা তারা পাননি বলে জানান তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স